মাওলানা মওদূদী রাহিমাহুল্লাহ এ যুগের জ্ঞান সাধকদের জন্য অনুপ্রেরণা -রাশেদুল ইসলাম

আমাদের পৃথিবী অনেক সুন্দর। সুন্দর পৃথিবীতে অন্যতম সুন্দর হলো মানুষ। স্বভাবিকভাবেই সুন্দরের সৃষ্টিকর্তার সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। সুন্দর মানুষের সৌন্দর্য প্রকাশের মূল অবলম্বন হচ্ছে জ্ঞান। জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা আমলের জন্য। মানবকুলের পৃথিবীতে আগমনের উদ্দেশ্য যেমন আল্লাহর দাসত্ব করা, তেমনি আল্লাহর দাসত্ব মানে আল্লাহর নির্দেশে ব্যক্তি হিসেবে মানবকুলের জন্য কাজ করা। আর আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী এই আমলের জন্য জ্ঞান জরুরি। জ্ঞান মূলত আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত, তিনি যাকে চান তাঁর (আল্লাহর) বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার থেকে তাকে সামান্যই দান করেন।

জ্ঞান অর্জনের মূল উদ্দেশ্য দুনিয়ায় আল্লাহ নির্ধারিত দায়িত্বের আমানত রক্ষা করা। এই যে দায়িত্ববোধের চেতনা, তার মূল্যায়ন কতটুকু (?) তা আজ এক বিরাট প্রশ্ন। বর্তমানে পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষ জ্ঞানার্জনের মূল উদ্দেশ্য থেকে দূরে। জ্ঞানের উদ্দেশ্য যেন জীবিকা অর্জনের মূল হাতিয়ার! আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি সোনার বাংলাদেশ গোলামির জিঞ্জির থেকে স্বাধীন হয়ে আজ অবধি এটাই বাস্তবতা হিসেবে আমরা দেখতে পাচ্ছি। মানুষ বিএ-এমএ পাস করছে চাকরি বা জীবিকা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে। এমন কাউকে পাওয়া খুব মুশকিল বিষয় যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্ঞানার্জনের তাগাদা অনুযায়ী কেউ নিজ সন্তানকে অন্তত পক্ষে চাকরির জন্য পড়াশোনা করাচ্ছেন না। একটু যারা চিন্তাশীল, তাদের জন্য বিষয়টি বুঝতে পারা খুব সহজ হলেও আমরা এই গণ্ডি থেকে বেরুতে পারছি না। এ যেন- ‘জানলেও মানতে পারছি না’ টাইপের ব্যাপার।

প্রারম্ভিক এই আলোচনার সমাপনী আমরা এভাবে টানতে পারি যে, বিশ্বব্যাপী জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে যে ব্যাপক উন্নয়ন-অগ্রগতি আমরা দেখতে পাচ্ছি, তার বড় অংশই আল্লাহর নির্ধারিত নির্দেশনার বাইরের। যদি কেউ প্রশ্ন করে বসেন যে, এই বড় অংশের বিপরীতে ছোট অংশ কতোটা ছোট; তখন উত্তরে যা বলা সম্ভব।
একটু খেয়াল করলে খুব খোলামেলাভাবে একটা বিষয় অনুধাবনযোগ্য। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া পূর্ণ মর্যাদা অনুযায়ী মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য সূরা আলে ইমরানের ১১০ নং আয়াতের যে বিধান আমরা পেয়েছি, তার প্রয়োগে আমরা বিপরীত চিত্র দেখতে পাই আমাদের কার্যকলাপে। এই অবজারভেশন জ্ঞান চর্চাকারী পৃথিবীর সকল মানুষকে নিয়ে নয়। বরং আমরা যারা কুরআনের জ্ঞানার্জনে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছি, তাদের জন্য। আমরা কুরআন থেকে জ্ঞান অর্জন করছি তার প্রয়োগের জন্য, কিন্তু দুনিয়ায় তার প্রভাব ও বিস্তৃতি খুবই সামান্য। উপমহাদেশে এই অবস্থা আরো দুর্বল। গত শতাব্দীর শুরুর দিকে এখানকার জ্ঞানসাধকদের দ্বারা বেশ একটা প্রভাব বিস্তারের চিত্র আমরা ইতিহাসে দেখে থাকি। কিন্তু দিনকে দিন তা ম্লান হয়ে একেবারেই অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়ে। কুরআনকে আল্লাহ যেভাবে জীবনের সকল প্রায়োগিক ক্ষেত্রে বিধান হিসেবে গ্রহণ করার জন্য বলেছিলেন, বাস্তবে তার উল্টোটাই বেশি ঘটেছে। শুধুমাত্র গুরুগম্ভীর তত্ত্ব হিসেবে এবং ক্ষেত্রবিশেষে শুধু নিজ জীবনের অল্প কিছু আনুষ্ঠানিক ইবাদত বোঝার ও মানার হাতিয়ার হিসেবে চর্চা হচ্ছে। কুরআনের জ্ঞানের ব্যাপকতা অনেক ক্ষেত্রে অনুপস্থিত। অর্থাৎ কেউ কেউ কুরআন থেকে জ্ঞানার্জন করেন জীবিকা নির্বাহকে উদ্দেশ্য করে।

গেলো শতাব্দীর ত্রিশের দশকে মানুষকে পুনরায় নবী করিম সা.-এর জন্য আল্লাহ নির্ধারিত পন্থা অনুযায়ী জ্ঞান চর্চার বিপ্লবাত্মক কর্মকৌশল নিয়ে জ্ঞানের ভুবনের এক মহীরুহ হিসেবে উপমহাদেশে মাওলানা মওদূদী নিজেকে আল্লাহর মেহেরবানিতে সমাজে মেলে ধরেন। বিগত চৌদ্দ শতাব্দীর ইতিহাসের নিরিখে জ্ঞানের ভুবনে এক সন্ধানী ঈগল হিসেবে আমরা যাকে দেখতে পাই। জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থার সম্প্রসারণে সাহাবায়ে কেরামের ধরনকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার এক অদম্য স্পৃহা নিয়ে তিনি ব্যাপৃত ছিলেন টেবিল ও জমিনে একসাথে। আমরা যারা এ যুগের জ্ঞানপিপাসু হেরায়ি দায়িত্ববান হিসেবে নিজেদের নিয়োজিত করার সৌভাগ্য লাভ করেছি, তাদেরকে তাই জানা দরকার এই বিপ্লবী সাধকের জীবনের বিশাল জ্ঞানের অঙ্গন সম্পর্কে।

চিন্তাবিদ মাওলানা মওদূদী
যারা কুরআনের ভাষায় কুরআন পড়ার বা জানার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখি না (বিশেষ করে উপমহাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে এভাবেই গড়ে তুলছে), তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সা.-এর গড়া সোনালি সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ধারণা অনেকটা পরিষ্কারভাবে বুঝবার সুযোগ থাকে না। মাওলানা তাঁর চিন্তাধারাকে এই বিশেষ সংকট খুঁজে বের করে তার সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়েছেন। ইসলামের বিভিন্ন দিক নিয়ে যেসকল স্কলার কিতাবাদি লিখে গেছেন, তাদের মধ্যকার সমন্বয় সাধন করে এক নতুন আঙ্গিকে জীবন পরিচালনার সকল দিক ও বিভাগের উপর চিন্তাশীল ও বাস্তবধর্মী লিখা লিখেছেন। তাঁর এই বিশাল লেখনীর ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার পূর্বেই তিনি পত্রপত্রিকায় লিখে লিখে নিজের চিন্তার জগৎ সম্প্রসারণের বিষয়টি আমাদের জন্য ভাববার বিষয় হিসেবে নিতে বাধ্য করেছেন। আসলেই আজ এতদিন পরেও আমরা ভাবতে বাধ্য হচ্ছি তাঁর চিন্তার রাজ্য-পরিধি নিয়ে।

চিন্তাজগতের নতুন বাঁক
মাওলানার লেখনীর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, অনেক চিন্তাশীল ব্যক্তির চিন্তার মধ্যে ঐক্য স্থাপন। আর এ বিষয়টি তিনি করেছেন অনেক নিপুণভাবে। আমরা যারা জ্ঞান চর্চার চেষ্টা করি, তাদের একটি নিয়মিত প্রবণতা হচ্ছে, রেফারেন্সভিত্তিক সংকলন অথবা ব্যক্তিগত মতামত পেশ করা। মাওলানা এর ব্যতিক্রম। তিনি পাঠক তথা মানুষের চিন্তাগত দর্শন ভাবনায় রেখে নতুন দিক উন্মোচন করেছেন।
আল্লাহর রাসূল সা. সাহাবায়ে কেরামদের প্রত্যেককে স্বাধীন সত্তার বিকাশে সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে যেসকল সাহাবী জ্ঞান চর্চা তথা বুদ্ধিবৃত্তিকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তাঁদের বড় একটি দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো, প্রচলিত জীবনব্যবস্থার অসারতা নিজ অন্তরে যতই গেঁথে থাকুক না কেন, তা উৎখাতে কুরআনিক জ্ঞানকে বিধান হিসেবে মানা। মাওলানা মওদূদী তার জ্ঞান চর্চাকে সাহাবাদের দৃষ্টিভঙ্গি চর্চার সাথে মেলাতে চষে বেড়িয়েছেন জ্ঞানভুবনে। তাঁর সমৃদ্ধ লাইব্রেরি এবং বইয়ের চারপাশের ফুটনোট তা-ই নিশ্চিত করে আমাদের ব্যাকুল মননে। যে কারণে চিন্তাজগতে সাহাবাদের অনুরূপ মনোবৃত্তির বিকাশ ঘটেছে।

নিষ্কণ্টক আমলভিত্তিক চিন্তার লালন
মাওলানা মওদূদীর চিন্তা-দর্শনের অন্যতম একটি বিশেষ দিক হচ্ছে, জ্ঞানের কাক্সিক্ষত ডেস্টিনেশন আমলকে হৃদয়াবেগের সাথে মিলিয়ে নেওয়া। আমাদের আমলি জিন্দেগির একটি বড় দুর্বলতা হচ্ছে, ধারণার ঘাটতি নিয়ে আমল করা। বিশেষ করে আল্লাহর সাথে আমাদের কৃত চুক্তির বাধ্যবাধকতার নিরিখে আমরা যেভাবে আমলের ব্যাপারে সিরিয়াস হওয়ার কথা, তার বাইরে গিয়ে আমলগুলো অনুভূতির চেয়ে আনুষ্ঠানিকতা নির্ভর করে ফেলি। এবং এটা করার ক্ষেত্রে আন্তরিকতার অভাব থেকে যায়, বিষয়টি এমন নয়। এক্ষেত্রে মাওলানার প্রতিটি সাহিত্যকর্মের মধ্যে একটি বিষয় খুব সুস্পষ্টভাবে আমরা দেখি, তা হলো- আল্লাহর নির্দেশ শুধুমাত্র বাধ্যবাধকতার বিষয় নয়, তার মধ্যে ভালোবাসার স্ফুরণ থাকতে হবে। আর এই ভালোবাসা বাধ্য করবে আমলের গভীরতা নিশ্চিতে নিজেকে নির্ভাবনার জীবন পরিচালনায়।

দায়বদ্ধতা নয় বরং দায়িত্বানুভূতি নিশ্চিতে লিখেছেন
মাওলানার শুভাকাক্সক্ষী এবং ভক্তদের অনেকের ধারণা, তাঁর লেখনী সমাজের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে দায়বদ্ধতা থেকে লিখেছেন। আমি বলবো- তা নয়; বরং তিনি এই দুনিয়ার বুকে আল্লাহর বান্দা ও প্রতিনিধি হিসেবে প্রাপ্ত দায়িত্ব-কর্তব্যের জেরেই লিখেছেন। আমরা যারা এ প্রজন্মের জ্ঞান পিপাসু, তাদের জন্য এখানে এক বিশেষ মেসেজ রয়েছে। তা হলো- মাওলানা মওদূদীর মতো করে দায়িত্বের পরিধি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে পরিকল্পিত পদক্ষেপে এগুতে হবে। যাতে করে জীবনাবসানের পূর্বেই আমরা আমাদের প্রাপ্ত দায়িত্বের সবটুকু পালনে তৎপর হই।
খুব শান্তভাবে এবং সহজ মানসিকতা নিয়ে লক্ষ করলেও বোঝা সহজ হবে যে, মাওলানা বর্তমান বিশ্বের মূল সঙ্কট চিত্রিত করে তার উপর সংস্কার প্রস্তাব পেশ করে গেছেন। জাহেলিয়াত বেছে নেয়ার জন্য একজন অমুসলিম ব্যক্তি যেভাবে আগ্রহী, মুসলিম হিসেবে জন্ম নেয়া মানুষগুলোও একই পদাঙ্ক অনুসরণ করতে দ্বিধা করছে না। এবং ক্ষেত্র বিশেষে রাষ্ট্রব্যবস্থার বৈধতা দানকে জায়েজ মনে করছে অনেকেই। এই সংকট নিরসনে সতর্কতার সাথে সমস্যার রুটগুলো খুঁজে বের করে তা কেটে দেওয়ার যৌক্তিকতা বিচার করেছেন তিনি। আমাদের জন্য এ এক অনন্য শিক্ষা।

জ্ঞান ভুবনের আকর্ষণীয় চরিত্রবান শিক্ষক
আমরা ইসলাম বোঝার জন্য সহায়ক সাহিত্যকর্ম যেভাবেই বিশ্লেষণ করি না কেন, মাওলানার লেখনীর প্রতি এক বিশেষ আকর্ষণবোধ আমাদেরকে বিমোহিত করে সবসময়। এর একটি বিশেষ কারণ তার নিষ্কলুষ চরিত্র। দ্বীনের দাঈ হিসেবে তিনি নিজেকে রাসূল সা.-এর সাহাবাদের মতো ঈমান নিশ্চিতে চরিত্রকেই বিশেষ গুরুত্বের জায়গায় রেখেছেন। আমরা তাঁর প্রত্যেকটি বইয়ে এবং বক্তব্যে অন্তর্গত অনুভূতির বাস্তব প্রতিফলনকেই বিশেষভাবে দেখতে পাই। তাঁর জীবনের সংক্ষিপ্ত সফর উপমহাদেশের প্রত্যেক আলেমকুলের অন্তরে ভাবনা সৃষ্টি করেছে এই অনন্য বৈশিষ্ট্য।
এখন পর্যন্ত মাওলানাকে নিয়ে এবং তাঁর সাহিত্যভাণ্ডার নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, যারাই এ হেরায়ি সুসাহিত্য অধ্যয়ন করেছে, তারা সবাই তাঁর ছাত্রত্ব গ্রহণ করে নিয়েছেন অন্তরে অন্তরে। কারণ, তার লেখনী ও বক্তব্যের অন্যতম একটি আঙ্গিক হচ্ছে, শেখার মানসিকতা তৈরি হওয়া। তিনি আজ পৃথিবীতে না থাকলেও তাঁর লেখনী বা বক্তব্যের টান আমাদেরকে পুনর্পাঠে আগ্রহী করে। এটা একজন প্রিয় শিক্ষকের বেলাতেই কেবলমাত্র ঘটে থাকে।

মাওলানার চিন্তাধারার ব্যাপারে অভিযোগ টিকছে না
ভারতীয় উপমহাদেশে আলেমদের মতানৈক্য ও বিভক্ত মতাদর্শ নিয়ে নিজেদের কট্টর অবস্থান অত্যন্ত বেদনার। সামান্য কারণে একে অপরের প্রতি কাদা ছুড়াছুড়ি এবং বাজে মন্তব্য করা যেন এক ভয়ঙ্কর বদ স্বভাবে পরিণত হয়েছে। শুধুমাত্র আকিদার ভিন্নতার কারণে কথিত অনেক আলেম মাওলানা মওদূদীর লেখা থেকে কিছু কিছু অংশ কেটে নিয়েছেন এবং ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। এক্ষেত্রে তারা অত্যন্ত বাড়াবাড়ি ও জঘন্য মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ কাফির ফতোয়া পর্যন্ত দিয়েছেন। অথচ ইক্বামাতে দ্বীনের কাজে উপমহাদেশের মুসলিম উম্মাহকে তিনি জাগিয়ে তুলেছেন, কিং সউদের অনুরোধে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক রূপরেখা প্রদান করেন এবং কিং সউদ পুরস্কার অর্জন করেন। আরব বিশে^র আলেমগণ কেউ মাওলানা মওদূদীর ওপর বিরূপ মন্তব্য করেননি।

মাওলানার ব্যাপারে যারা অপবাদ দেন এইরকম দু’ধরনের লোক সম্পর্কে আলোচনা করা যায়। প্রথমত, অভিযোগ করাকে টার্গেটে পরিণত করেন এমন লোক। এরকম মনোভাব নিয়ে অভিযোগ করেন তারাই, যাদের মধ্যে ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রতিষ্ঠা গৌণ। নিজেদের প্রভাববলয় বাড়ানো নিয়ে তারা ব্যস্ত থাকেন। নিজেদের বাইরে অন্য কাউকে জ্ঞানী মনে করেন না। জামায়াতকে যারা বিরোধিতার নজরে দেখেন, তাদের মধ্যেই এরকম মনোভাব দেখা যায়। এ ধরনের লোকেদের ব্যাপারে এড়িয়ে চলা নীতি জারি রাখা ছাড়া উপায় নেই। কারণ, ইনারা যুক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তির ব্যাপারে উদাসীন; দলের অন্ধভক্ত। দ্বিতীয়ত, না জেনে না বুঝে অন্যের কথা শুনে অভিযোগ করা। এ ধরনের লোকসংখ্যা নেহাত কম নয়। আমাদের সমাজে এরকম চিন্তাধারার প্রতি আস্থা খুব। মাওলানার বই পড়ে বা ঘাঁটাঘাঁটি করে অভিযোগ করছেন বা ভুল ধরছেন, এমন লোকসংখ্যা বেশ কম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে খণ্ডিত কোনো লেখনী বা বক্তব্য থেকে পর্যালোচনা ও সমালোচনা করা হয়।

প্রথমোক্ত স্বভাবের ব্যক্তিদের ব্যাপারে তো কথা বলা কঠিন। তবে দ্বিতীয় ধরনের ব্যক্তিদের ব্যাপারে কথা হচ্ছে, তারা বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা করেন বলেই তাদেরকে সমাজের সচেতন মানুষেরা গ্রহণ করে থাকেন। তাই তাদের প্রতিটি কথা যুক্তিগ্রাহ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। পড়াশোনা এবং ঘাঁটাঘাঁটি করেই নিজের মতামত পেশ করা দরকার।
আর জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের জনশক্তিদের ব্যাপারে অনেকের ধারণা হলো, তারা মাওলানার অন্ধভক্ত। এক্ষেত্রে প্রশ্ন দাঁড়ায়- ঈমানের চর্চায় নিয়োজিত কোনো ব্যক্তির পক্ষে আল্লাহ ও রাসূল সা.-এর বাইরে কারো প্রতি নিঃসংকোচে আস্থা রাখার সুযোগ আছে কি?
তখন প্রশ্ন দাঁড়াবে অন্য একটা। জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের জনশক্তিরা ঈমানের চর্চা করেন কিনা! এরকম প্রশ্নের উত্তরে কথা হচ্ছে, তারা কোনো শরয়ী ওজর ছাড়াই ফরজ ত্যাগ করেন কিনা, কবিরা গুনাহ করেন কিনা? বিশ্ববরেণ্য ফুকাহায়ে কেরামদের মতে, ঈমানদার চেনার এটাই মানদণ্ড। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় হচ্ছে, ফরজ-ওয়াজিব মেনে চলা এবং কবিরা গুনাহ ত্যাগ করা সংগঠন দু’টির বাইয়াতের জনশক্তি হওয়ার অন্যতম শর্ত। এরপরেও অনেকের অভিযোগ থাকে দলের প্রতি এবং এ দলের প্রতিষ্ঠা মাওলানা মওদূদীর প্রতি। তখন অভিযোগ ও কটাক্ষগুলো সহ্য করা ছাড়া আর উপায় কী থাকে!

শেষ মুহূর্তে আমাদের পাঠ
আমাদের জ্ঞান সাধনাকে জাগ্রত করতে মাওলানা মওদূদীর পাঠ-পঠন ও প্রেজেন্টেশন বিশেষভাবে বোধে নেওয়া জরুরি। আমরা যখন পথে প্রান্তরে দ্বীনের রোশনাই ঝরাই, তখন শুধুমাত্র সাময়িক বিবেচনা নিয়ে কথা বলি না। কারণ, এটা সুন্নাহ নয়। সুন্নাহ হলো তাৎপর্যপূর্ণ কুরআনের মর্মবাণী দাওয়াত প্রাপ্তের মনে গেঁথে দেওয়া। এক্ষেত্রে মাওলানা আমাদের জন্য গাইডলাইন সরবরাহ করে গেছেন। আমরা তার চর্চায় নিয়োজিত হতে পারলে খোলাফায়ে রাশেদার অনুরূপ স্বপ্নময় পৃথিবীর পুনরাবৃত্তিতে ভূমিকা রেখে আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব পালন করে নিশ্চিন্তমনা হয়ে কবরে যেতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
লেখক : সম্পাদক, ছাত্র সংবাদ

মন্তব্য