গবেষণা করে কী ভাত-মাছ মিলে?

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে যারা চিন্তাশীল, তারা একথা বলে আফসোস করেন যে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসম্পন্ন গবেষণা হচ্ছে না। সরকার এই খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়াচ্ছে না। সেইসব চিন্তাবিদদের সাথে আপনিও সুর মেলাবেন, এমনটাই স্বাভাবিক। তবে আমার পর্যালোচনা একটু ভিন্নতর।

বর্তমান ভর্তি পরীক্ষার মৌসুমে আমার মতো যারা ছাত্রদের চরম প্রতিযোগিতা দেখে দেখে অভস্ত্যতা এনেছেন মস্তিস্কে, এই প্রতিযোগীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পরের অনুভূতি  তাদের বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়।

আমরা যারা কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রেরণা তৈরিতে কাজ করি, তারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে এমন বক্তব্য দিয়ে থাকি, যা তাকে জীবনে স্বাপ্নিক হতে উদ্বুদ্ধ করে বটে। আবার সুকৌশলে আমরা নেগেটিভ বিষয়গুলো স্কিপ করি তাদের কাছে। কারণ, নেগেটিভ বিষয় মাথায় কাজ করতে থাকলে সামনে এগুনো কঠিন।

ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হয়ে যখন ১ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে, তখন সে এক চরম হতাশার মধ্যে পড়ে যায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ গরিব ঘরের সন্তান হয়ে থাকে। যার কারণে হলে থাকা ছাড়া তাদের আর উপায় থাকে না। আর হলে পর্যাপ্ত সীট না থাকায় গাদাগাদি করে থাকাটা বর্তমানে কালচার হয়ে পড়েছে।

শুরুতেই র‍্যাগিং, গেস্টরুমে অত্যাচার, মানসম্মত খাবারের অভাব দেখতে দেখতে ৫ বছর পার করতে হয় এসব মেধাবীদের। বছর তার স্বাভাবিক নিয়মে পেরুনোর প্রয়াস পেলেও পারিবারিক আর্থিক অনটনের প্রবৃদ্ধি তাকে বিহ্বল করে। এজন্য লিপ্ত হতে হয় আরেক মহাযুদ্ধে।

চাকুরীর পরীক্ষা।

বিগত যুদ্ধে জয়ের ধারা ধরে রাখতে বিসিএস টার্গেট করাই মুখ্য হয়। কারণ, প্রারম্ভিক স্বপ্ন যুগে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিষয় খুলে না বললেও এখন নিজেরাই বুঝতে শেখে মেধাবীরা। তাই বিগত যুলুম নির্যাতনের বিপরীতে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার আসল জায়গা হিসেবে সরকারি চাকুরি পাওয়াই ব্রত হয়।

এবার আপনারাই বলুন, নির্যাতন-যুলুম পেরুনো একজন শিক্ষার্থী পরিবার সামলানোর ধান্দায় থাকবে নাকি গবেষণাগারে গিয়ে আবারো গণরুমের দশায় পতিত হবে?

মোরালঃ

১.

গবেষণা খাতে অগ্রগতির চিন্তা করার আগে ছাত্রদের নিয়মিত প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোই সরকারের মূল কর্ম হওয়া দরকার।

২.

শিক্ষা খাতের উন্নয়ন না ঘটলে আবরার হত্যা স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হবে এবং দেশ মঙ্গোলীয়দের মতো উন্নত হবে।

আক্ষেপঃ

বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন হয়, শিক্ষা খাত তবুও উন্নয়নের তালিকাভুক্তি পেলো না!

মন্তব্য